বিয়ের পূর্বশর্ত

সূত্র : islamicexperiences.com : ইশরাত আলীর বিয়ের পূর্বশর্ত
বিসমিল্লাহ আর রহমান আর রাহীম. আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু. এক জ্ঞানী ব্যক্তি একবার ড, “একজন মানুষ তার শৈশব খেলায় কাটায়, তার যৌবন ঘুমন্ত এবং বার্ধক্য কাঁদছে”. জনতা জিজ্ঞেস করল, “বৃদ্ধ বয়সে সে কাঁদবে কেন??” সে উত্তর দিল, “সেই ব্যক্তি কাঁদবে কারণ সেই সময়ই সে ঘুম থেকে জেগে উঠবে. সে বুঝতে পারবে কতটা সময় সে নষ্ট করেছে!”

এক মুহূর্তের জন্য, তোমার চোখ বন্ধ কর. চিন্তা করুন. যদি এখনো বিয়ে না করে থাকেন, তারপর কিছুক্ষণ খোলা মন নিয়ে ভাবুন. নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কি ধরনের একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করতে চান?

আমি জানি অনেক লোকের মনে একজন আদর্শ মানুষ থাকে যাকে তারা বিয়ে করতে চায়. এটা সত্য এবং এইভাবে চিন্তা করা ভুল নয়. আমি বিশ্বাস করি এটা করা ঠিক আছে.

যাহোক, কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া সহজ নয়. কখনও কখনও স্থপতির মতো গভীর খনন করতে হয়, পাখির মতো উঁচুতে উড়ে যা আমরা যা চাই তা পাওয়ার জন্য একটি উষ্ণ জায়গায় স্থানান্তর করতে চায়.

আমরা সকলেই সেই নিখুঁত ব্যক্তিকে কল্পনা করি যার সাথে আমরা আমাদের বাকি জীবন কাটাতে চাই কিন্তু আমরা কি কয়েক ধাপ পিছনে ফিরে আয়নায় নিজেদেরকে দেখেছি?. আমরা যদি নিজেদের দিকে তাকাই, আমরা চাই সেই আদর্শ মানুষটির মতো আমরা কিছুই নই. তাহলে আমরা কীভাবে একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারি. আমি যদি একজন নিখুঁত মানুষকে বিয়ে করতে চাই, আমি নিজেকে নিখুঁত হতে হবে না? বিয়ে মানেই দেওয়া না নেওয়া! আমি যে পরিপূর্ণতা পাচ্ছি তা কিভাবে ফিরিয়ে দিতে পারব আমার স্ত্রীর কাছ থেকে?

ইহা সহজ! উত্তর একটাই!

আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে. আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালার জন্য আমাদের অন্তরকে পবিত্র করুন. তাহলেই আমরা আল্লাহর সাহায্য পেতে পারি এবং ইনশাআল্লাহ আমরা মহান কাউকে বিয়ে করব.

বিয়ে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত. এটি প্রচুর সুখ এবং শান্তি নিয়ে আসে. তবে এটি একটি বিশাল দায়িত্ব. যখন আমরা আমাদের বিবাহ চুক্তি স্বাক্ষর করি, আমাদের এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে. এর সাথে আসা সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে. বিয়ে একটা পরীক্ষার মতো. আমরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি না নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করতে পারি না? আমরা কি পারি? আমরা যদি তা করি তবেই আমরা ব্যর্থ হব. আমরা এটা চাই না. আমরা আমাদের জীবনে সফল হতে চাই. আমরা সফলতার উম্মত, ব্যর্থতা নয়.

আপনি যদি অবিবাহিত হন এবং আপনার যদি প্রচুর অবসর সময় থাকে, সেই অবসর সময়টাকে আশীর্বাদ মনে করুন. যাদের অবসর সময় নেই এবং অবিবাহিত তাদের জন্য, আপনি অন্তত চেষ্টা করতে পারেন ইনশাআল্লাহ. ইচ্ছা থাকলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়.

আমি এমন কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছি যা শুধুমাত্র আমাদের দ্বীনের উন্নতি করতে সাহায্য করবে না বরং এটি আমাদেরকে একটি সুস্থ দাম্পত্য জীবন বজায় রাখতে ভালো জীবনসঙ্গী হতে সাহায্য করবে।.

1. জ্ঞান অর্জন করুন:

আদ-যহাবী সংশ্লিষ্টরা এ কথা বলেন: "আসুন বসুন এবং ইবনুল মুবারকের ভাল বৈশিষ্ট্যগুলি গণনা করি।" তাই, তারা তালিকা শেষ: "জ্ঞান, ফিকহ, সাহিত্য, ব্যাকরণ, ভাষা, তপস্বী, বাগ্মিতা, কবিতা, রাতে নামাজ পড়া, তাই মুসলিম নর-নারী উভয়েরই উচিত বিবাহকে ইবাদাত হিসেবে বিবেচনা করা, হজ, জিহাদ, সাহসিকতা, সহজাত প্রবৃত্তি, শক্তি, যা তাকে চিন্তা করে না তাতে অল্প কথা বলা, ন্যায়পরায়ণতা, এবং তার সঙ্গীদের সাথে বিরোধের অভাব।"

একদা এক শায়খ ড, “অল্পবয়সী মুসলিম নর-নারীদের বিয়ের আগে ইসলামে বিবাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক”. আমার মনে হয় বিয়ের আগে বিয়ের ফিকাহ শিখে নিলে ভালো হয়. আমি দ্য আইডিয়াল মুসলিমের মতো বই পড়ার পরামর্শ দিই, আদর্শ মুসলিম.

একবার আমি একজন বোনের সাথে দেখা করি যিনি আমাকে বলেছিলেন যে তেরো বছর হয়ে গেছে এবং সে তার বিয়েতে খুব খুশি. সে আমাকে বইটি পড়তে বলল, “সুখী বিবাহ”. আমাকে এখনো পড়তে হবে ইনশাআল্লাহ. আপনি যদি প্রচুর বই পড়তে পারেন তবে এটি ভাল.

আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারীকে জিজ্ঞেস করা হলো:
“এটা কি যা একজনের স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী করে?”
সে উত্তর দিল: “প্রতিনিয়ত বই খুঁজছেন।”

2. নিজের যত্ন নেওয়া:

হ্যাঁ! আমাদের নিজেদের ভালো যত্ন নেওয়া উচিত. যদি আমরা না করি, তাহলে আমরা কীভাবে আমাদের স্ত্রীর যত্ন নিতে পারি?

• প্রতিদিন ব্যায়াম করো
• পরিষ্কার থেকো
• দিনে তিনবার সঠিকভাবে খান.
• আপনি ভাল পোষাক নিশ্চিত করুন
• আপনার চেহারা বজায় রাখুন, ইত্যাদি

আল্লাহ কোরআনে বলেন:
“ও’ আদম সন্তান! নামাজের প্রতিটি সময় এবং স্থানে আপনার সুন্দর পোশাক পরিধান করুন: খাও এবং পান কর: কিন্তু অতিরিক্ত দ্বারা অপচয় না, কারণ আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না. বলুন, কে বারণ করেছে সুন্দরীকে [উপহার] আল্লাহর, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন, এবং জিনিস, পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধ, [যা তিনি প্রদান করেছেন] ভরণপোষণের জন্য? বলুন: আপনার ব্যক্তিগত সময়সূচী এবং অগ্রাধিকার অনুযায়ী আপনার সময় পরিবর্তিত হবে, এই দুনিয়ার জীবনে, যারা বিশ্বাসী তাদের জন্য, [এবং] বিশুদ্ধভাবে বিচার দিবসে তাদের জন্য. এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি তাদের জন্য যারা বোঝে।” (7:31-32)

3. নিজেকে দ্বীনের উপর রাখুন:

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন. প্রতিদিন বা সপ্তাহে অন্তত দুইবার কোরআন পড়ুন ইনশাআল্লাহ. সাদাকা দাও. যতটা পারো রোজা রাখো.

আবু আদ-দারদা (আল্লাহর ওয়াস্তে আনহু) বলেছেন:
“আমার প্রিয় বন্ধু (অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি জিনিস করার উপদেশ দিয়েছেন যতদিন আমি বেঁচে থাকব না: প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহা প্রার্থনা করতে, এবং বিতরের নামায না পড়া পর্যন্ত ঘুমাবেন না।” (মুসলিম, 5/235)

4. আপনার চরিত্রে কাজ করুন:

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যার আচার-ব্যবহার সর্বোত্তম, বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তোমাদের মধ্যে আচার-আচরণে উত্তম।” (বুখারী দ্বারা সম্পর্কিত (6035)

আপনি নিজেকে যে কারও চেয়ে ভাল জানেন. কিছু ভালো আচরণ করতে শিখুন. আপনার চারপাশের মানুষদের সম্মান করুন. সবার মুখে হাসি.

আল-ফুদাইল ইবন ‘ইয়াদ বলেন, “যখন মানুষের চরিত্র খারাপ হয়, তারপরও খারাপ (এবং দরিদ্র) তার ধর্মের অনুশীলন, তার অবস্থা, এবং তার ভালবাসার অংশ [মানুষের মধ্যে].” (শিষ্টাচারের বই, পৃষ্ঠা 435)

5. সুন্নাহ অনুসরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করুন:

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বোত্তম চরিত্র এবং শিষ্টাচার ছিল. তিনি সকলের প্রতি সদয় ও মহৎ ছিলেন. আমরা তাঁর উম্মত এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের রোল মডেল. আর কেউই না!

আল্লাহ কোরআনে বলেন:

“বলুন (হে মুহাম্মদ সা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানবজাতির কাছে): আপনি যদি (সত্যিই) আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো (অর্থাৎ, ইসলামী একেশ্বরবাদ গ্রহণ করুন, কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করুন), আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন…” (3:31)

বিয়ের আগে আপনি অনেক কিছু করতে পারেন. আপনি যদি এখন সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেন, একবার আপনি বিয়ে করলে আপনার জন্য সবকিছু সহজ হয়ে যাবে. আপনি ঠিক কী করবেন এবং অন্যদের কাছ থেকে কী আশা করবেন তা জানতে পারবেন.

তোমার দাম্পত্য জীবনের শুভকামনা. আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা'আলার কাছ থেকে সর্বোত্তম প্রত্যাশা করুন এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রচুর দোয়া করতে ভুলবেন না. আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালার কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনাকে একজন ধার্মিক জীবনসঙ্গী দান করেন, শ্বশুরবাড়িতে মহান এবং আপনি একজন ভাল জীবনসঙ্গী হয়ে উঠবেন ইনশাআল্লাহ.

আমরা সকলেই আমাদের মনের এই বিশেষ ব্যক্তিকে বিয়ে করতে চাই. যাহোক, যখন আমরা আমাদের হৃদয়ের ভিতরে তাকাই, আমরা অনেক অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি. সেই অন্ধকারকে আমাদের ইমানের আলো দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে. তাহলেই আমরা আমাদের দাম্পত্য জীবন এবং আমাদের জীবনে সফল হতে পারব. আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা'আলা জানেন আমাদের অন্তরে কি আছে এবং আমরা কি চাই. আমরা যদি সত্যিই সেরা চাই, আমাদের ঘুম ত্যাগ করতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত. তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণের জন্য আমাদেরকে তাঁর কাছে আত্মনিয়োগ করতে হবে. আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা আমাদের জন্য যা ভালো তা চান. আমাদেরই ভালো মুসলমান হতে হবে ইনশাআল্লাহ. এই উপদেশ প্রথমে নিজের এবং পরে সবার জন্য ইনশাআল্লাহ. আমি আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি যেন আমরা জান্নাতের দম্পতিদের অন্তর্ভুক্ত হই! আমীন

উমর বিন আল খাত্তাব রা (আল্লাহর ওয়াস্তে আনহু) বলেছেন, “পরিপূর্ণতা ছাড়া আর কিছুই সফল হয় না”

আসুন ইনশাআল্লাহ এটা করি!! আল্লাহু আকবার!

“আল্লাহর প্রতি আপনার প্রত্যাশা ও আশা কতটা ভালো এবং তাঁর প্রতি আপনার আস্থা ও বিশ্বাস কতটা সত্য, আল্লাহ আপনার আশা ক্ষুন্ন করবেন না, যেহেতু তিনি আশাবাদীদের আশার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন না এবং কোন প্রচেষ্টাকে বৃথা যায় না।”- বই: “প্রতিফলন: আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রত্যাশা করা”

প্রবন্ধ জমা দিয়েছেন ইশরাত আলী
_____________________________________________
সূত্র : islamicexperiences.com : ইশরাত আলীর বিয়ের পূর্বশর্ত